বিচারক ও বিচারপতির পার্থক্য কি | জানুন মূল ফারাক ও দায়িত্ব

বিচারক ও বিচারপতির পার্থক্য কি? কে কেমন দায়িত্ব পালন করেন, তাদের নিয়োগ ও কার্যপরিধি কীভাবে আলাদা, জেনে নিন বিস্তারিত।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বিশ্লেষণে আমার একটি বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সংবিধানে ‘বিচারপতি’ শব্দটি শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির (Chief Justice) জন্য ব্যবহৃত হলেও, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারকদের ক্ষেত্রেও ‘বিচারপতি’ সম্বোধন প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বিশেষত দুইটি স্তরে বিভক্ত

১. নিম্ন আদালত (Subordinate Judiciary) : নিম্ন আদালত ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জেলা জজ কোর্ট ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নিম্ন আদালতসমূহ সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসনিক ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধীন।

২. উচ্চ আদালত (Supreme Court of Bangladesh) : বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত উচ্চ আদালত দুটি বিভাগ নিয়ে গঠিত, হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ। এই ২য় স্তরেই ‘বিচারপতি’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে সংবিধান ও বাস্তবতার মধ্যে এক ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

সাংবিধানিক পরিভাষা ও বিচারক পরিচিতি

সংবিধানের, অনুচ্ছেদ ৯৪(২) তে বলা আছে –

The Supreme Court shall consist of the Chief Justice, to be known as the Chief Justice of Bangladesh, and such number of other Judges, as the President may deem it necessary…

এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির জন্য “Chief Justice” উপাধিটি সংরক্ষিত, আর অন্যান্য বিচারপতিদের সাধারণভাবে “Judges” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, কেবল একজনই ‘বিচারপতি’ পদবি লাভ করেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী।

প্রচলিত রীতিনীতি এবং আইনি প্রেক্ষাপট

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের সকল বিচারককে বিচারপতি বা Justice হিসেবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ:

☞ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ (প্রধান বিচারপতি)

☞ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (আপিল বিভাগের বিচারক)

☞ বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমান (হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক)

এই সম্বোধন শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং এটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিয়োগপত্র, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট, গেজেট, রায় ও আদেশের প্রতিলিপিতে অনুসৃত একটি প্রতিষ্ঠিত প্রোটোকল বা আইনগত রীতির (legal convention) অংশ। যদিও সংবিধানে সরাসরি ‘Justice’ শব্দটি প্রধান বিচারপতির জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, তবুও দীর্ঘ দিনের ব্যবহার ও আদালতের অভ্যন্তরীণ প্রটোকলের ভিত্তিতে অন্যান্য বিচারকরাও বিচারপতি হিসেবে পরিচিত।

আইনগত বিশ্লেষণ

বাংলাদেশে আইন ও বিচারব্যবস্থায় এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা রীতিনীতির মাধ্যমে গঠিত হলেও তা কার্যত বাধ্যতামূলক এবং প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। যেমন: মামলার রায় লেখার ভাষার ধরণ, আদালতকক্ষে বিচারকদের বসার বিন্যাস, “Your Lordship” সম্বোধন, বা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ‘বিচারপতি’ হিসেবে চিহ্নিত করা ইত্যাদি। এই সবই judicial custom এবং legal convention হিসেবে স্বীকৃত, যেগুলো সরাসরি বাংলাদেশ সংবিধানে না থাকলেও বাস্তব বিচার প্রক্রিয়ায় মৌলিক ভূমিকা রাখে।

পরিশেষে, আমি বলতে চাই ‘বিচারপতি’ শব্দটি শুধুমাত্র প্রধান বিচারপতির জন্য নির্দিষ্ট থাকলেও, সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য সকল বিচারকদের ক্ষেত্রেও এই শব্দের ব্যবহার একটি সম্মানসূচক ও রীতিগত স্বীকৃতি পাশাপাশি আভিধানিক দিক থেকে একটি আইনগত ভ্রান্তি।