জামিন কি? জামিনের প্রকারভেদ

-

জামিন (Bail) হলো আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া, যাতে তিনি মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় উপস্থিত থাকেন। বাংলাদেশের আইনে জামিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

জামিন কি?

দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, জামিন এমন একটি আইনি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতের অনুমতিতে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে এবং জামানতে মুক্তি পান। এটি অপরাধের প্রমাণিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে।

জামিনের প্রকারভেদ

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী জামিন দুটি ভাগে বিভক্ত—

(ক) জামিনযোগ্য অপরাধের জামিন এবং

(খ)অজামিনযোগ্য অপরাধের জামিন

জামিনযোগ্য অপরাধ (Bailable Offense):

যেসকল অপরাধ অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাওয়ার আইনি অধিকার রাখেন তাকেই জামিন যোগ্য অপরাধ বলে।

যেমন—

সাধারণ মারামারি (দ: বি: ৩২৩)

মানহানি (দণ্ডবিধির ৫০০)

হালকা চুরি (দণ্ডবিধি ৪২০)

অজামিনযোগ্য অপরাধ (Non-Bailable Offense):

যে গুরুতর অপরাধসমূহে জামিন পাওয়া আদালতের বিবেচনার উপর নির্ভর করে তাকে জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে। যেমন-

হত্যা (দণ্ডবিধি ৩০২)

ধর্ষণ (দণ্ডবিধি ৩৭৬)

এছাড়াও আইনে আরো বেশ কিছু জামিনের ধরন রয়েছে। যেমন-

অন্তর্বর্তীকালীন জামিন (Interim Bail):

মামলার শুনানির আগ পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে যে জামিন দেয়া হয় তাকে অন্তর্ব্ররতীকালীন জামিন বলে।

আগাম জামিন (Anticipatory Bail):

গ্রেপ্তারের আগেই আদালত হতে গ্রেফতার এড়াবার জন্য যে জামিন নেয়া হয় তাকে আগাম জামিন বলে। মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ এবং মহামান্য হাইকোর্টের আগাম জামিন দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আসামী আগাম জামিনে মুক্ত থাকলে পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করবে না। আগাম জামিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হয়ে থাকে। সাধারনত ৪ সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে কনসার্ন কোর্টে বেল ফার্নিশ করতে হয়।

জামিন পাওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী

মাননীয় আদালত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

-অপরাধের প্রকৃতি ও গুরুত্ব

-অভিযুক্ত ব্যক্তি কি আগেও অপরাধ করেছেন কিনা

-মামলার তদন্তের অগ্রগতি

-অভিযুক্ত ব্যক্তির পলায়নের সম্ভাবনা

-সমাজে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা

-আসামী অসুস্থ কিনা

-আসামী মহিলা কিনা

ইত্যাদি।

কিভাবে জামিনের আবেদন করতে হয়?

(ক) নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন

অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করবেন। তবে আইনজীবী ছাড়াও নিজের জামিন নিজে চাওয়া যায়। এক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

যদি নিম্ন আদালত জামিন না দেয়, তাহলে মাননীয় দায়রা জজ কোর্টে আদালতে মিস করে করে জামিন চাওয়া যাবে।

(খ) হাইকোর্টে জামিন আবেদন

গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে হাইকোর্ট ডিভিশনে জামিন আবেদন করা যায়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন জামিন মঞ্জুর করার বিশেষ এখতিয়ার রাখে।

জামিন বাতিলের কারণ

কোনো ব্যক্তির জামিন পেতে হলে তাকে নির্দিষ্ট শর্ত পালন করতে হয়। কিন্তু নিম্নলিখিত কারণে জামিন বাতিল হতে পারে-

-অভিযুক্ত ব্যক্তির পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হওয়া

-আদালতের নির্দেশ অমান্য করা

-সাক্ষী বা মামলার প্রমাণের ওপর প্রভাব বিস্তার করা

-পলাতক হওয়া

কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদালতের রায় ও দৃষ্টান্ত

বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায়ের ভিত্তিতে জামিন সংক্রান্ত নীতিমালা নির্ধারিত হয়েছে। যেমন—

State vs. Arfanul Haque (2020): এই মামলায় জামিনের শর্ত সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছিল।

Bangladesh vs. Aslam Hossain (2018): এই মামলায় জামিনযোগ্য ও অজামিনযোগ্য অপরাধের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করা হয়েছিল।

জামিন হলো ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল মামলার বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্যক্তির মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তির স্বাধীনতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে। তবে জামিনের অপব্যবহার রোধ করতে আদালত বিভিন্ন শর্ত এবং জামানত আরোপ করতে পারে।

LawyerClue
LawyerCluehttps://lawyerclue.com
  LawyerClue offers expert legal insights, tips, and resources to help individuals and businesses navigate the complexities of the law.

Share this article

সাম্প্রতিক

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Recent comments